আদমদীঘিতে খাল খননে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

আদমদীঘিতে খাল খননে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

আহসান হাবিব শিমুল (আদমদীঘি প্রতিনিধি)

এলজিইডি, পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি(পাবসস) এবং ইউনিয়ন পরিষদ এই ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি ও নির্দেশ মোতাবেক শুকনো খাল মাটি কাটা শ্রমিকের মাধ্যমে কোদাল ব্যবহার করে খনন করতে হবে। কিন্তু খনন করা হচ্ছে এস্কেভেটর বা ভেকু মেশিন ব্যবহার করে। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে খাল খননের এমন কাজ চলছে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায়।

‘আমইল-ইন্দইল খাল পুনঃখনন’ উপ-প্রকল্পে এভাবে খালের কাদা কেটে ৫৫ লাখ টাকার অধিকাংশ টাকা লোপাটের পথ তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। মেশিন ব্যবহার করে খননের নামে খালটিকে নালায় পরিনত করা হচ্ছে। এস্কেভেটর মেশিনের বডির মাপ মোতাবেক খালের মেঝের প্রস্থ হচ্ছে ৬/৭ ফুট। মেশিন দিয়ে কাটা কাদা মাটির অধিকাংশ খালের গায়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির তোপে গায়ের মাটি খুলে ফের খালে এসে পড়ার এবং দ্রুত ভরাট হয়ে যাবার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এই খাল পুনঃখননের উদ্দেশ্য হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্টীর আপদকালীন কর্মসংস্থান, শুস্ক মৌসুমে ৬০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া ও প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন মাছ আহরণ করা। যার মাধ্যমে ৫টি গ্রামের অন্তত সাড়ে ৪শ’ অধিক উপকারভোগী খানা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কিন্তু নালার মত করে খনন করা খালের পানিতে ওই পরিমানের অর্ধেক জমিতেও সেচ দেওয়ার পানি মিলবে না, মিলবে না মাছও। এমনটা দাবী করছেন এলাকার বিশিষ্টজনরা। মেশিন ব্যবহার করায় কর্ম মিলছে না দরিদ্র জনগোষ্ঠীর। খাল কাটার নামে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না প্রভাবশালীদের হামলা-মামলার ভয়ে।

জানা গেছে, প্রায় তিন বছর পূর্বে ২০১৮ সালে পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির নির্বাচিত কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাল খনন প্রকল্প গ্রহণে এলজিইডি এবং জাইকার তহবিল থেকে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয় ২০১৯ সালে। ২০২০ সালে কাজ শুরু হবার কথা ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রান্ত কারনে হয়নি। ফলে চলতি ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের ‘আমইল-ইন্দইল খাল পুনঃখনন’ প্রকল্প কাজের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের দিন থেকে মেশিনে খনন কাজ চলছে অবাধে। নির্দেশ ও চুক্তিনামায় স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে যে, চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক দল (এলসিএস) গঠন এবং তাদের মাধ্যমে কাজ করার ব্যাপারে প্রথম পক্ষকে সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করবে দ্বিতীয় পক্ষ বা পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি। এলসিএস দলে যাতে এলাকার দরিদ্র লোকজন যারা মাটির কাজ করে থাকে, বিশেষ করে ছিন্নমুল, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যক্তা ও দুঃস্থ মহিলাগণ অগ্রাধিকার পান তা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এর কোন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মেশিনের মাধ্যমে মাটি নামক কাদা কাটা হলেও বিল তোলা হচ্ছে তালিকাভুক্ত শ্রমিকদের নামে।

এদিকে, উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর প্রতি দলে ২৫ জন করে ১২ শ্রমিকদল গঠন করেছে এবং প্রতি দলের সর্দারের নামে ব্যাংক হিসাব খুলেছে। কিন্তু আদমদীঘি উপজেলার ব্যাংকগুলো বাদ দিয়ে পাশের দুপচাঁচিয়া উপজেলা শহরের অগ্রণী ব্যাংক শাখায় ব্যাংক হিসাব খুলেছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান সংবাদকর্মীদের  বলেন, মোট কাজের ৭০ ভাগ মেশিনে এবং ৩০ ভাগ শ্রমিক ব্যবহার করা যাবে। তাহলে মেশিন মালিক বা চালকের নামে বিল তৈরি না করে তালিকাভুক্ত শ্রমিকের নামে করা হচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের সদুত্তোর দিতে পারেননি।

আপনি আরও পড়তে পারেন